শরৎচন্দ্রের “বিলাসী” গল্পটি প্রথমে প্রকাশিত হয় ‘ভারতী' পত্রিকায় ১৩২৫ বঙ্গাব্দের (১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দ) বৈশাখ সংখ্যায়। “ন্যাড়া” নামের এক যুবকের নিজের জবানিতে বিবৃত হয়েছে এ গল্প। এই গল্পের কাহিনিতে শরৎচন্দ্রের প্রথম জীবনের ছায়াপাত ঘটেছে।
“বিলাসী” গল্পে বর্ণিত হয়েছে ব্যতিক্রমধর্মী দুই মানব-মানবীর চরিত্রের অসাধারণ প্রেমের মহিমা, যা ছাপিয়ে উঠেছে জাতিগত বিভেদের সংকীর্ণ সীমা। গল্পে সংঘটিত একের পর এক ঘটনা এবং বিভিন্ন চরিত্রের মধ্যে সংঘাতের মাধ্যমেই কাহিনি অগ্রসর হয়। ঘটনার দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মধ্য দিয়ে কাহিনিতে গতি সঞ্চারিত হয়েছে। লেখক কোন অবস্থান থেকে কাহিনি বলছেন, সেটা অনেক সময় কাহিনি বর্ণনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । লেখক সর্বদর্শী অবস্থান থেকেও কাহিনি বর্ণনা করতে পারেন। সেক্ষেত্রে তিনি সবগুলো চরিত্র ও ঘটনা— নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে বর্ণনা করেন। যেমনটি দেখা যায় সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ ‘লালসালু' উপন্যাস এবং মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের “মাসি-পিসি” গল্পে। পক্ষান্তরে গল্পটি উত্তম পুরুষের ভাষ্যেও বর্ণিত হতে পারে। এক্ষেত্রে গল্পে আমি, আমাকে ইত্যাদি সর্বনাম এসে যায়। এরকম ক্ষেত্রে কখনো-কখনো লেখক নিজেই কাহিনির একটা চরিত্রের ভূমিকা নেন, হয়ে ওঠেন কথক । “বিলাসী” গল্পে লেখক সেই ভূমিকা গ্রহণ করেছেন। বর্তমান সংকলনের “অপরিচিতা”, “আহ্বান” ও “তাজমহল” গল্পে উত্তমপুরুষের ভাষ্য গৃহীত হয়েছে। “বিলাসী” গল্পের নাম চরিত্র কর্মনিপুণ, বুদ্ধিমতী ও সেবাব্রতী বিলাসী; শরৎসাহিত্যের অন্যান্য উজ্জ্বল নায়িকাদের মতোই একজন। যে প্রেমের জন্যে নির্দ্বিধায় বেছে নিয়েছে স্বেচ্ছামৃত্যুর পথ আর তার প্রেমের মহিমাময় আলোয় ধরা পড়েছে সমাজের অনুদারতা ও রক্ষণশীলতা, জীবনের নিষ্ঠুর ও অশুভ চেহারা ।
আরও দেখুন...